Thursday, November 14, 2013

Rickshaw যখন Risky


আমার ছেলেবেলা যেহেতু মধ্য কলকাতায় কেটেছে, সেহেতু রিক্সা বলতে আমি হাতে টানা রিক্সা ই বুঝি। সাইকেল রিক্সা চাপবার সুযোগ হত হাওড়াতে আমার মেজ জেঠুর বাড়ি গেলে বা গুপ্তিপাড়া নামে এক গ্রামে আমার মামার বাড়ি গেলে। রিক্সাওয়ালারা সাধারণত বিহার থেকে আসা খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ - এবং হিন্দিভাষী। সব ভদ্রলোকদের "বাবু" ও ভদ্রমহিলাদের "মাইজি" বলে সম্বোধন করত। এবং মজার ব্যাপার হল এইসব ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলারা রিক্সাওালাদের সাথে মারাত্মক হিন্দিতে কথা বলত, যেমন - 

" অ্যাই রিক্সাওলা (রিক্সাওয়ালা নয় কিন্তু), তালতলা বাজার যায়েগা? কিতনা লেগা? কেয়া বাত করতা হ্যায়! পনেরো টাকা? ইয়ার্কি পায়া হ্যায়? দশ টাকা মে রোজ যাতা হ্যায়।"

বা 

" অ্যাই রিক্সাওলা, বাজার (বাজারের থলে) থোরা তিনতলা মে উঠা দেনা হোগা। তুম হামারা পেছনমে পেছনমে আও।"  - ইত্যাদি 

তা এই রিক্সা নিয়ে কিছু মজার ঘটনার অভিজ্ঞতা আমার আছে যা আজ আমি লিখব।(কিছু চরিত্র স্বাভাবিক কারনে কল্পনার আশ্রিত - কিন্তু ঘটনাগুলো সব নির্ভেজাল সত্যি) 

এখানে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে - রিক্সাওালারা সাধারণত স্যান্ডো গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে। এই তথ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনি বাঁচলে ............

দৃশ্যটা কিছুটা এরকম - দুজন বাঙালি ভদ্রমহিলা একটি রিক্সায় চেপে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোডের ওপর দিয়ে যাচ্ছেন। দুজনেরই যাকে বলে বেশ ভারিক্কি চেহারা - মোটাও বলা চলে। রোগা প্যাটকা রিক্সাওালা চালাচ্ছে। সমস্যাটা সেখানে নয়। যারা কোনদিন জীবনে কিছু ভারি জিনিস তুলেছেন, তারা জানবেন যে ভারি জিনিস তোলবার সময় পেটের পেশীগুলো একটু শক্ত হয়ে যায় এবং পেটটা একটু হলেও ঢুকে যায়। এবার এই রিকশাওয়ালাটি বোধহয় কোমরের লুঙ্গির গিটটা একটু আলগা করে বেধেছিল হবে - ব্যাস, স্বাভাবিক নিয়মেই তা মাঝপথে খুলে যায় - এবং আরও স্বাভাবিক নিয়মে রিকশাওয়ালা রিক্সার হাতল ছেড়ে নিজের লুঙ্গি চেপে ধরে। 

পরিনাম - দুজন ভদ্রমহিলা কলকাতার রাজপথে, প্রকাশ্য দিবালোকে চালকুমড়োর মত গড়াগড়ি। রিকশাওয়ালা প্রচণ্ড যাকে বলে embarrassed and scared. ভদ্রমহিলারা আরও বেশি embarrassed এবং তারও চেয়ে বেশি embarrassed and entertained  হচ্ছে যে সব জনতা এই ঘটনাটির সাক্ষী হয়ে রইলেন।  


"কুছ নাহি হোগা"

আমি বোধহয় তখন ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি। একদিন স্কুলের পর আমি এবং আমার এক বন্ধু (নামটা উহ্যই থাক) বাড়ি ফিরব। আমার সাথে আমার দিদি এবং বন্ধুর সাথে তার মা। কোন রিক্সা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা রিক্সা পাওয়া গেল। কিন্তু চারজন একটা রিক্সায়? আমরা যাকে বলে চিন্তিত এবং indecisive.  
রিক্সাওয়ালা দাঁত বার করে বলল, " চিন্তা মাত কিজিয়ে। নয়া রিক্সা হ্যায়। কুছ নাহি হোগা। আপ দো রুপিয়া জ্যাদা দে দিজিয়েগা।"
প্রচণ্ড গরম - অগত্যা আমরা দুই হৃষ্টপুষ্ট বন্ধু এবং আমাদের আভিবাবকেরা সেই 'নতুন' রিক্সায় 'দুগগা' বলে চড়ে বসলাম। এবং সারাটা রাস্তা আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল - 'রিক্সার বিভিন্ন দুর্ঘটনা' (জানিয়ে রাখি, আগের সেই রিক্সাওয়ালার হাতল ছেড়ে নিজের লুঙ্গি ধরার ঘটনাটাও আলোচনা হয়েছিল)

যাই হোক, ভালয় ভালয় আমরা বন্ধুটির বাড়ির সামনে পৌঁছলাম। স্বস্তির নিঃশ্বাসটা একটু তাড়াতাড়িই বোধহয় ফেলেছিলাম আমরা। রিক্সাওয়ালা রিক্সাটি মাটিতে রাখল এবং আমরা কিছু করবার আগেই রিক্সার দুটো হাতল ঠিক মাঝখান থেকে ভেঙ্গে গেল। 

পরিণাম - আমরা দুই বন্ধু যেহেতু কোলে বসেছিলাম, সেহেতু গড়িয়ে রাস্তার ধারে নর্দমায় ( সৌভাগ্যবশত গ্রীষ্মকাল থাকার দরুন নর্দমাটি শুকনো ছিল) এবং আমার দিদি এবং আমার বন্ধুর মা রিক্সার হাতল ধরে প্রানপনে ঝুলে থাকার চেষ্টা। 
যাই হোক সে যাত্রায় কেউই গুরুতর আহত হয়নি।
বেচারা রিক্সাওয়ালা!


লুঙ্গি ড্যান্স




Image Credit: Ei Samay epaper archives www.epaper.eisamay.com
Image Source : http://www.epaper.eisamay.com/epaper...-6/6315921.JPG

উত্তর এবং মধ্য কলকাতায় আজও কিছু জলের কল দেখা যায় যেখানে গঙ্গার জল আসে। এই কলগুলোকে সবাই 'গঙ্গাকল' বলে থাকে। আমাদের ছোটবেলায় বাসস্টপগুলো কংক্রিটের একটা ছাউনি মত হত। সেগুলো অধিকাংশ সময়ে ফুটপাথবাসিরা দখল করে রাখত। এবং অনেক গরিব মানুষের মত রিক্সাওয়ালারাও সেইসব বাসস্টপগুলোর নিচে রাত্রে শুত। 
জোড়া গির্জার ঠিক উল্টো ফুটপাথে যে বাসস্টপটা আছে, আজ থেকে বছর কুড়ি আগে সেখানেও একটা  কংক্রিটের ছাউনি ছিল, যার নিচে কিছু গরিব মানুষ এবং কিছু রিক্সাওয়ালা শুত। এবং স্টপটার পাশেই একটা গঙ্গাকল ছিল। সেই সময় স্টপটার পাশে দুর্গাপুজো ও কালীপূজো হত। তা সেই সময় এক কালীপূজোর রাত্রে আমি এবং আরও কয়েকজন বাজি ফাটাচ্ছি। (তখন শব্দ বাজির অফ এত নিষেধাজ্ঞা ছিল না আর হ্যাঁ - ক্যানিং স্ট্রিটে ১০০ টাকায় ১০০ খানা ভাল চকোলেট বোম পাওয়া যেত)।
তা আমরা কয়েকজন ছেলে মিলে বোম ফাটাচ্ছি তুবড়ি জ্বালাচ্ছি। রাত তখন একটা পেরিয়ে গেছে। চকোলেত বোমগুলো সামনে ট্রামলাইনের ওপর ছুঁড়ে দিচ্ছি। গাড়ি খুব কম তাই সমস্যা বিশেষ নেই। যাই হোক একটা বোম নিয়ে ধুপকাঠিতে সলতে ধরাতে গিয়ে দেখি প্রায় ৭০ মিটার দূরে একটা এম্বাস্যাডার গাড়ি আসছে। ভাবলাম বেশ দূরে আছে, বোমটা জ্বালিয়ে ছুঁড়ে দি - কিন্তু গাড়িটার স্পীডটা ঠিক বুঝতে পারিনি। বোমটা ছোড়ার পরে দেখলাম গাড়িটা হুশ করে সামনে দিয়ে চলে গেল আর বোমটা ট্রামলাইনেই ওপর দেখতে পেলাম না। কিছু দূরে গিয়ে যখন গাড়িটা বর্তমানের পুরনো অফিসটার সামনে পৌঁছেছে, তখন হঠাত গাড়ির সামনে বোমটা ফাটল। (অনুমান করতে পারি যে  চকোলেট বোমটা গাড়িটার সামনের গ্রিলে আটকে যায় এবং পরে ফাটে।) গাড়িটা হঠাৎ খানিকক্ষণ একেবেকে চলে থেমে গেল। তারপর চলে গেল। 
আমার তখনই বোঝা উচিৎ ছিল যে কিছু একটা ঘটবে। যাই হোক, এবার তুবড়িতে মন দিলাম। আগেই বলেছি যে বাসস্টপের কাছে একটা গঙ্গাকল ছিল। তা সেই জল যে ড্রেন দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল তার আশেপাশে স্বাভাবিক কারনে কিছু জল জমে ছিল। তাই তুবড়িগুলো জ্বালাবার পরে সেগুলো অই জলের মধ্যে ছুঁড়ে দিচ্ছিলাম। এরকমই একটা তুবড়ি হঠাৎ একটু স্পিন করে পাশের ফুটপাথে গিয়ে লাগল এবং তুবড়িটা ভেঙ্গে আগুনের প্রচুর ফুলকি সেই বাসস্টপের নিচে শুয়ে থাকা রিক্সাওয়ালাদের উপর গিয়ে পড়ল। 

পরিনাম - ঘুমন্ত অবস্থায় জামাকাপড়ের (পড়ুন লুঙ্গি) ভেতর ফুলকি ঢুকে যাওয়ায় তারা লাফিয়ে উঠে (কেউ কেউ লুঙ্গি খুলে) ফুলকি ঝাড়তে লাগল। 
আমার দেখা সেই প্রথম "লুঙ্গি ড্যান্স"
আমি তারপর কি করেছিলাম তা নাই বা বললাম।  








2 comments:

  1. Hilarious, as I remember some Bong author actually tried to prove that there is a force that acts against the earth's gravity, drawing an object towards the heavens by using the narrative of one such misadventure where the passenger was a rather well fed Maru guy and the poor rickshaw puller was the typical thin lean Bihari

    ReplyDelete